মাটিরাঙ্গার রোমাঞ্চকর পর্যটন স্পট বড় কুম্ব

খাগড়াছড়ি জেলাজুড়েই পাহাড় ও সবুজের রাজত্ব। এখানকার প্রকৃতিতে লুকিয়ে আছে অসংখ্য ঝরনা, ছড়া আর মনোমুগ্ধকর স্থান- যার অনেকগুলো এখনো ভ্রমণপিপাসুদের কাছে অজানা। তেমনই এক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যঘেরা রহস্যময় স্থান হলো ‘বড় কুম্ব’।
প্রকৃতির নিজস্ব ছন্দে গঠিত এই জায়গাটিতে একদিকে রয়েছে কালচে পাথরের প্রাকৃতিক দেয়াল, আর অন্যদিকে ঘন বনঝোপ। মাঝখানে পাথরের ফাঁক গলে নেমে এসেছে ঝরনার স্বচ্ছ পানি, যা বর্ষাকালে আরও তীব্র স্রোতে প্রবাহিত হয়ে পাথরে তৈরি করেছে গভীর গর্ত। গর্তে জমে থাকা পানিতেই গড়ে উঠেছে ছোট ছোট জলাধার। স্থানীয়রা ভালোবেসে এই নাম দিয়েছে।
লোককথা ও বিশ্বাস
বড় কুম্বের গভীরতা আজও অজানা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, একবার ১০টি পানি সেচ মেশিন দিয়েও এর পানি শেষ করা সম্ভব হয়নি। এমনকি শুষ্ক মৌসুমেও পানি কখনো শুকায় না বলে দাবি করেন। এই স্থানের পাশেই রয়েছে একটি প্রাচীন শিবমন্দির। জুম চাষের আগে এখানকার মানুষ পূজা দেন, আবার ফসল ঘরে তোলার পরেও কৃতজ্ঞতা স্বরূপ পূজা দেন অনেকেই। বিশেষ করে বৈসু উৎসবের সময়, এখানে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়।
যাত্রা এবং অভিজ্ঞতা
বড় কুম্বে যেতে হলে যেতে হবে মাটিরাঙ্গা উপজেলার বড় ত্রিপুরাপাড়া থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার পাথুরে পথ পেরিয়ে। পথটি একদিকে দুর্গম হলেও আশেপাশের প্রকৃতি এতটাই মোহময় যে হাঁটার কষ্ট অনুভূত হয় না। পথে দেখা মিলবে পাহাড়ি গ্রাম, গাছগাছালি, ঝরনা, ছোট ছড়া আর বুনো ফুলের। মাঝে মাঝে দেখা দেবে নাম না জানা পাখিরা। পথপ্রদর্শক হিসেবে পাশে পাবে পাড়ার কিশোর-কিশোরীদের, যারা আগ্রহভরে সহযাত্রী হয় পর্যটকদের।
কিছু নিয়মকানুন মানতেই হবে
বড় কুম্ব এলাকাটি সংরক্ষিত ধরণের একটি জায়গা। এখানে যাওয়া যাবে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে। ছবি তুলতে হলে স্থানীয়দের অনুমতি নিতে হবে, উচ্চস্বরে গান বা চিৎকার একেবারেই নিষিদ্ধ। পাড়ার শান্ত পরিবেশ এবং মন্দিরের পবিত্রতা বজায় রাখার জন্যই এসব নিয়ম।
কিভাবে যাবেন
মাটিরাঙ্গা সদর থেকে সিএনজি, মোটরসাইকেল বা ব্যক্তিগত গাড়িতে পৌঁছে যেতে পারবেন তবলছড়ি ডাকবাংলা বাজার পর্যন্ত। সেখান থেকে আরো ৫ কিলোমিটার গেলে মিলবে বড়পাড়া, যেখানে পর্যন্ত যানবাহন যায়। এরপর বাকি পথ পায়ে হেঁটে যেতে হয় বড় কুম্বে।