গরমে পর্যটকদের পছন্দ খাগড়াছড়ির রিছাং ঝর্ণা

abc

খাগড়াছড়িতে এই গরমে বেড়াতে আসা পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ ‘রিছাং ঝর্ণা’। তাইতো রিছাং ঝর্ণার শীতল পানিতে গা ভাসাতে প্রতি বছর বিভিন্ন উৎসব পালনে বিপুল সংখ্যক পর্যটকের আগমন ঘটে। 

তবে এবার ঈদ উল আজহার ছুটিতেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ঈদের ছুটির ৭ম দিনে প্রচুর পর্যটক আসেন রিছাং ঝর্ণার শীতল পানিতে গা ভিজাতে। খাগড়াছড়ির আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার পশ্চিমে রিছাং ঝর্ণা। মূল সড়ক থেকে নেমে এক কিলোমিটার দক্ষিণে গেলেই শোনা যায় ঝর্ণার কলতান।

ঝর্ণায় যাওয়ার পথটাও দারুণ রোমাঞ্চকর। দূরের উঁচু-নিচু সবুজ পাহাড়। জুমঘর, বুনো ঝোপসহ নাম না জানা অসংখ্য বুনো ফুল যেন অভ্যর্থনা জানাবে। আর বারতি পাওয়া হিসেবে রয়েছে এক কিলোমিটারের সড়কের দুই পাশে স্থানীয়দের ঘরবাড়ি। পরিবেশটাই এমন যে মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই। যেদিকে চোখ যায় শুধু সবুজের সমাহার। পাহাড়ের বিভিন্ন পাখির কিচিরমিচির শব্দ। গাড়ি থেকে নেমে ঝর্ণায় পৌঁছার আগে পাহাড় থেকে নামতে হবে। পাহাড় নামার পরেই ২৫০ ধাপের বিশাল এক সিঁড়ি। সেই সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতেই ঝর্ণার ধ্বনি। সিঁড়ি শেষ না হতেই ঝর্ণার দেখা পাওয়া যায়। ঝর্ণার কাছে গেলে এক পবিত্র স্নিগ্ধতায় দেহ মন ভরে ওঠে। ১২০ ফুট উঁচু পাহাড় থেকে পড়ে ঝর্ণা পানি। আজ শুক্রবার  সকালে গিয়ে দেখা যায় ঝর্ণার স্বচ্ছ জলে হই-হুল্লোড় করছেন বেশ কিছু পর্যটক।

জেলা সদর থেকে ১১ কিলোমিটার আর খাগড়াছড়ি-ঢাকা আঞ্চলিক সড়ক ছেড়ে প্রায় এক কিলো মিটার দক্ষিণে রিছাং ঝর্ণা। মারমা ভাষায় ‘রি’ শব্দের অর্থ পানি আর ‘ছাং’ শব্দের অর্থ কোন উঁচু স্থান হতে গড়িয়ে পড়া। অর্থাৎ কোন উঁচু স্থান হতে জলরাশি গড়িয়ে পড়া আবার ত্রিপুরা ভাষায় এর অন্য নাম ‘তেরাং তৈকালাই’। অথাৎ তেরাং-এর অর্থ পানি আর তৈকালাই’ এর অর্থ হচ্ছে পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়া পানি। তবে ঝর্ণাটি “রিছাং ঝর্ণা” নামে বেশি পরিচিত।খাগড়াছড়ি জেলার বেশকটি ঝর্ণার মধ্যে ‘রিছাং ঝর্ণা’ অন্যতম আকর্ষণীয়।

২০০৩ সালে ভ্রমণ পিপাসুদের নজরে আসা রিছাং ঝর্ণাটি। সময়ের ব্যবধানে খাগড়াছড়ির অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে নিজের জায়গা তৈরি করে নিয়েছে রিছাং ঝর্ণা। এক সময় এই ঝর্ণায় যাওয়ার রাস্তা না থাকলেও জেলা প্রশাসন ও জেলা পরিষদের উদ্যোগে রাস্তা হওয়ায় পর্যটকরা সহজে এ ঝর্ণায় যেতে পারছেন। প্রায় ৩৫ মিটার উচ্চ পাহাড় থেকে পানি আছড়ে পড়ছে। এমন মনোরম দৃশ্য আপনাকে অন্য জগতে নিয়ে যাবে। যা  ঘন্টার পর ঘন্টা উপভোগ করার মত। আর আপনি চাইলে রিছাং ঝর্ণার পানিতে অনায়াসেই শরীর ভিজিয়ে নিতে পারবেন।

রিছাং ঝর্ণাটি পাহাড়ি প্রকৃতির মাঝে অবস্থান। ঝর্ণায় যাত্রা পথটাই দারুন রোমাঞ্চকর। এই ঝর্ণাকে ঘিরে প্রতিদিন বহু সংখ্যক পর্যটক এসে ভিড় করেন। আর   ঝর্ণার শীতল পানিতে গা ভিজিয়ে প্রকৃতির সাথে একাত্ম হন।

জেলা শহর থেকে চাঁদের গাড়ী,প্রাইভেট কার,মাইক্রোবাসে ঝর্ণার পাদদেশে এসে নেমে প্রায় ২০০ গজ পায়ে হাটা পথ। এই সামান্য পাহাড়ি রাস্তায় পাড়ি দিলেই দেখতে পাবেন পাহাড়ের বুক বেয়ে প্রায় ১০০ ফুট উঁচু থেকে নিচে আছড়ে পড়ছে ঝর্ণার জলরাশি। হয়তো আপনার ইচ্ছে করবে প্রকৃতির মাঝেই কাটিয়ে দেই সারাক্ষণ। ভ্রমণকারীরা যাতে  সহজে রিছাং ঝর্ণায় পৌঁছতে পারেন তার জন্য এখানে পাকা সিড়ি তৈরী করা হয়েছে।   

আপনি রিছাং ঝর্ণায় লোকাল বাসে ১০ টাকায় যেতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে আপনাকে খাগড়াছড়ি-ঢাকা আঞ্চলিক সড়কে হৃদয় মেম্বার পাড়া এলাকায় প্রায় দুই কিলোমিটার পায়ে হেটে যেতে হবে। অথবা মোটরসাইকেলে আসা-যাওয়া ১০০ টাকা ভাড়ায় রিছাং ঝর্ণায় ভ্রমন করতে পারবেন। 

এছাড়া রিছাং ঝর্ণা, আলুটিলা গুহা, বৌদ্ধ মন্দির ও জেলা পরিষদের কাছাকাছি দূরত্বে অবস্থিত। সে ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হয়,সবগুলো জায়গা একসাথে ঘুরে দেখলে। সবগুলো জায়গা ঘুরতে ১০/১২ জন মিলে চাঁন্দের গাড়ি রিজার্ভ করতে ২০০০ থেকে ৩০০০ টাকা লাগবে। এই জায়গা গুলো ঘুরে দেখতে  সময় লাগবে ৫ থেকে ৬ ঘন্টা সময়।

ঝর্ণা উপভোগ করতে সপরিবার এসেছেন চট্টগ্রাম থেকে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী বেলাল আহমদ।  তিনি বলেন, ‘ঈদের বন্ধের আগেই আমার ঠিক করেছি খাগড়াছড়ি দেখতে আসবো। পাহাড় দেখার জন্যই ছুটি কাটাতে আমরা খাগড়াছড়ি এসেছি। এ গরমে ঝর্ণাটি দেখে সত্যিই খুব ভালো লাগছে। যদিও সিঁড়ি বেয়ে নামতে একটু কষ্ট হয়েছে। বেলালের মতো আরও অনেক পর্যটক ঝর্ণা ঘিরে ভিড় জমিয়েছেন। তারা ঝর্ণাটি উপভোগ করার পাশপাশি পার্শ্ববর্তী আলুটিলা  পর্যটন কেন্দ্র, গুহা, তারেং আর জেলা পরিষদ পার্ক  এ স্পটও দেখছেন। 

রামগড় থেকে ঈদ উপলক্ষে ঘুরতে এসেছেন সাব্বির মাহমুদ, আরমান হোসেনসহ একদল তরুন। তারা জানান, বিভিন্ন জায়গায় বেড়ানোর ইচ্ছে থাকলেও গরমের কারণে ঝর্ণায় তারা এসেছেন।

রিছাং ঝর্ণার ব্যবস্থাপক নিপুন জয় ত্রিপুরা বলেন, ঈদের দিন থেকে পর্যটকের আসা শুরু হয়েছে। ঈদের পর থেকে এ পর্যন্ত দিন দশ হাজারের বেশি পর্যটক এসেছে। সামনে আরো পর্যটক বাড়তে পারে। 

জেলা প্রশাসক এ বি এম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার বলেন, ঈদকে কেন্দ্র করে আমাদের সকল পর্যটন কেন্দ্র গুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। যাতে পর্যটক এবং স্থানীয়রা নির্বিঘ্নে ঘুরতে পারে। 

কীভাবে যাবেন রিছাং ঝর্ণায়  যারা চট্টগ্রাম থেকে আসবেন তারা চট্টগ্রামের অক্সিজেন ও কদমতলী বিআরটিসি বাস টার্মিনাল থেকে সরাসরি খাগড়াছড়ি আসতে পারবেন। আর ঢাকা থেকে সেন্টমার্টিন, এস আলম, শ্যামলী, শান্তি পরিবহস সহসহ বিভিন্ন পরিবহনের বাস আসে রাতে এবং সকালে। খাগড়াছড়ি শহর বাস টার্মিনাল থেকে মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মাইক্রোবাস বা জিপে করে খাগড়াছড়ি থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার গিয়ে খাগড়াছড়ি-মাটিরাঙ্গা সড়কের ঝর্ণার মুখে রাস্তায় নামতে হবে। সেখান থেকে এক কিলোমিটার দক্ষিণে গেলেই রিছাং ঝর্ণা। গাড়ি অনুযায়ী ভাড়া হয়ে থাকে। তা ছাড়া প্রতি ঘণ্টায় লোকাল বাস চলাচল করে। তাছাড়া চট্টগ্রাম অথবা ঢাকা থেকে আসার পথে মাটিরাঙ্গা পার হয়েও রিচাং ঝর্ণার মুখে নামতে পারেন।

জেলা শহরে রাত্রি যাপনের জন্য বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে।দরদাম করে আপনার পছন্দমত হোটেলে রাত্রিযাপন করতে পারবেন। হোটেলে ভেদে এক রাত অবস্থানের জন্য আপনাকে ৪০০ টাকা থেকে ৩৫০০ টাকা প্রদান করতে হবে।জেলা  শহরে ভালো মানের আবাসিক হোটেলের মধ্যে রয়েছে পর্যটন মোটেল,হোটেল গাইরিং, হোটেল ইকোছড়ি ইন, অরণ্য বিলাস ও হোটেল প্যারাডাইজসহ মান সম্মত হোটেল। 

খাবারের জন্য শহরের শাপলা চত্বর এবং বাস স্ট্যান্ড এলাকায় বেশ কিছু রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এছাড়া পানখাইয়া পাড়ায় সিস্টেম রেস্তোরা, ব্যাম্বুতে ঐতিহ্যবাহী পাহাড়ি খাবারের স্বাদ নিতে পারেন। সূত্র : বাসস