রমনার সবুজে ঢাকার প্রশ্বাস

abc

ঢাকার কেন্দ্রে, শাহবাগ মোড়ের কাছে অবস্থিত একটি নীরব, সবুজ ঘেরা প্রান্তর— রমনা পার্ক। শহরের কোলাহল ও ক্লান্তির ভিড়ে এটি যেন এক শ্বাস নেবার জায়গা। প্রায় ৬৮ একরজুড়ে বিস্তৃত এই ঐতিহাসিক উদ্যান প্রতিদিন শত শত মানুষকে স্বস্তি দেয়, দেহে ও মনে আনে প্রশান্তি।

📖 ইতিহাসের পাতায় রমনা

রমনা পার্কের জন্ম ইতিহাসে ঘেরা। মোঘল আমলে এর গোড়াপত্তন হলেও ব্রিটিশ শাসনামলে, বিশেষত ১৯০৮ সালের দিকে পার্কটি পরিকল্পিত রূপ পায়। লর্ড ক্যানিংয়ের উদ্যোগে এটি হয়ে ওঠে ঢাকার অন্যতম সুসজ্জিত উদ্যান। একসময় এটি ছিল শহরের অভিজাতদের প্রাতঃভ্রমণ এবং সংস্কৃতি চর্চার জায়গা।

তবে ইতিহাসের আরেকটি করুণ অধ্যায়ও জড়িয়ে আছে এর সঙ্গে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণে ধ্বংস হয় রমনা কালীমন্দির। শহীদের রক্তে ভেজা সেই রাতের স্মৃতি আজও রয়ে গেছে উদ্যানটির গায়ে।


🌿 সবুজের মাঝে ব্যস্ত নগরজীবন

রমনা পার্কে প্রবেশ করলেই বদলে যায় পরিবেশ। একপাশে পাখির ডাক, অন্যদিকে জলাশয়ের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা শতবর্ষী বৃক্ষ।
প্রতিদিন ভোরে এখানে ভিড় জমে প্রাতঃভ্রমণকারী, দৌড়বিদ, যোগচর্চাকারী আর প্রকৃতিপ্রেমীদের।

"এখানে হাঁটতে হাঁটতে যে মানসিক প্রশান্তি পাই, সেটা আর কোথাও মেলে না," বললেন রমনা নিয়মিত আসা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন।


🎨 উৎসবে প্রাণ ফিরে পায় রমনা

রমনা পার্কের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত পহেলা বৈশাখ। প্রতি বছর বাংলা নববর্ষের সকালে ছায়ানটের গানে মুখর হয় এর প্রাঙ্গণ।
এদিন সকাল থেকেই হাজার হাজার মানুষ এখানে জড়ো হন, একসঙ্গে পুরনোকে বিদায় জানাতে ও নতুনকে বরণ করে নিতে।

এছাড়া ছুটির দিনে পরিবারসহ অনেকেই আসেন এই পার্কে—বিশেষ করে বিকেলের সময়টায় এটি হয়ে ওঠে ঢাকাবাসীর বিনোদনের প্রিয় স্থান।


📍 নাগরিক সুবিধা ও সীমাবদ্ধতা

রমনা পার্কে রয়েছে প্রশস্ত হাঁটার পথ, বিশ্রামের বেঞ্চ, লেক ও সুসজ্জিত বাগান।
তবে সচেতন নাগরিকরা বলছেন, মাঝে মাঝে পরিচ্ছন্নতা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ঘাটতি লক্ষ্য করা যায়।

“ভেতরে যদি আরেকটু পরিচ্ছন্ন টয়লেট ও পানীয় জলের ব্যবস্থা থাকত, তবে এটি আরও উপযোগী হয়ে উঠত,” মন্তব্য করলেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী রুনা খাতুন।


📷 সবুজ সৌন্দর্যের শহুরে প্রতিচ্ছবি

ছবি প্রেমীদের জন্যও রমনা এক অনন্য জায়গা। সকালবেলা কুয়াশা ঢাকা গাছপালা, কিংবা বিকেলে লেকের জলে সূর্যাস্তের প্রতিচ্ছবি—রমনার প্রতিটি কোণ যেন ক্যামেরার ফ্রেমে বন্দি করার মতো।


🔚 শেষ কথা

রমনা পার্ক কেবল একটি উদ্যান নয়—এটি এক শহরের শ্বাসপ্রশ্বাস, ইতিহাস আর সংস্কৃতির নিরব সাক্ষী। যতই ঢাকার আকাশ ভরে উঠুক কংক্রিট আর যানবাহনের শব্দে, ততই প্রয়োজন রমনার মতো সবুজ জায়গার।
কারণ, শহর বাঁচে শুধু ইট-সিমেন্টে নয়, বাঁচে গাছ, ছায়া আর নিঃশব্দতায়।